শাহ আলম কৌশিক/ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া চার সাহসী সন্তানের আত্মত্যাগ। এই আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদরা হলেন মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমার শাসন গ্রামের শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন, দত্তগ্রামের উবাইদুল হক, তারুন্দিয়া গ্রামের আশিকুল ইসলাম (রাব্বি) এবং রাজিবপুর ইউনিয়নের কামাল হোসেন।তাঁদের মধ্যে শহীদ কামাল হোসেনের কবরস্থানের স্থান নির্ধারণ হয়েছে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুর গ্রামে। তবে বাকি তিন শহীদ শাহরিয়ার, উবাইদুল ও আশিকুলের কবর পাকাকরণ কাজ চলছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তাদের পারিবারিক কবরস্থানে ।শনিবার (১২ জুলাই) এই চলমান কবর পাকাকরণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সানজিদা রহমান। পরিদর্শনকালে ইউএনও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং যত্নসহকারে শহীদের কবর পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন এবং সরকার পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকার মিরপুর-১০ গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।৪ আগস্ট নয়াপল্টনের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আন্দোলনে অংশ নিয়ে সরকারপন্থী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর আক্রমণে গুরুতর জখম হন শহীদ উবাইদুল হক। তাঁর পা ও হাত ভেঙে যায়, পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়, পায়ের তালুতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। ৬ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১৩ আগস্ট তিনি মারা যান। শহীদ উবাইদুল হক তেজগাঁও ২৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।তারুন্দিয়া ইউনিয়নের এই শহীদও আন্দোলনের সময় সরকারি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান। তাঁর কবর পাকাকরণ কাজও চলছে যথাযথভাবে।এই চার শহীদের নামই ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ জেলার শহীদ তালিকাভুক্ত গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা তাঁদের আত্মত্যাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।এ সময় শহীদ শাহরিয়ার বিন মতিনের বাবা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিল, আজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সম্মান ও সহমর্মিতা পাচ্ছি তা আমাদের গর্বিত করেছে।
ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, শহীদ শাহরিয়ার,শহীদ উবাইদুল হক,শহীদ আশিকুর রহমান, শহীদ কামাল হোসেন এই দেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় সরকার শহীদের কবরগুলিকে সম্মানজনকভাবে সংরক্ষণ করা জন্য পাকাকরণের মধ্য দিয়ে জুলাই শহীদের কবরে শহীদদের নাম, পিতার নাম,মাতার নাম,তার জম্ম তারিখ ও মৃত্যুবরণ করার তারিখ পাকাকরণ কবরে লিখা থাকবে। সরকার শহীদ পরিবারের পাশে আছে, এবং থাকবে।স্থানীয় জনসাধারণ ও সচেতন মহল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এই শহীদদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজম্মকে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করবে। কবর পাকাকরণের মতো উদ্যোগ শুধু সম্মান জানায় না, বরং শহীদের আত্মত্যাগের স্মৃতি ধরে রাখে।