ওমর ফারুক মুকুল /সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাব উদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসন কল্পে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় পক্ষের ডকুমেন্টস দেখা ও বক্তব্য শোনার পর নের্তৃবৃন্দ সহকারী অধ্যাপক বাবলুর রহমানকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানান পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সাথে সাথে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা ও রায়ের কাগজপত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়েরকৃত ও দপ্তর থেকে প্রেরিত চিঠি দ্রুত সময়ের মধ্যে নের্তৃবৃন্দের কাছে জমা দিতে উভয় পক্ষকে বলা হয়।আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর নুরুল আফছার মুরতাজা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্কুলে বিশেষ সভায় মিলিত হন। সভায় ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল সহকারী অধ্যাপক বাবলুর রহমান, অপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবীদার সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বর্তমান কমিটির সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারী, জমিদাতা, প্রতিষ্ঠাতার পুত্র, অভিভাবক, কলেজ শাখার শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে কমিটি রেজুলেশন করে আমাকে দায়িত্বে বসান। সেই থেকে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। হঠাৎ করে মোহাম্মদ আলী ভাই খুলনা আঞ্চলিক অফিস থেকে চিঠি আনলে আমি হাই কোর্টে রিট করি। মহামান্য আদালত রুল ও স্টে প্রদান করেন। যার মেয়াদ ১৬/৯/২৫। স্টে অর্ডার ভ্যাকেট করতে মোহাম্মদ আলী সুপ্রীম কোর্টের এ্যাপিলিয়েড ডিভিশনে মামলা দায়ের করলে মহামান্য আদালত "নো অর্ডার" রায় প্রদান করে আমার পক্ষে রায় দেন। আমার দায়ের করা ১০৯৬২/২৪ মামলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি সর্ব সম্মতিক্রমে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর দায়িত্ব পালনের জন্য রেজুলেশন করেছেন। মহামান্য হাইকোর্ট আমার মামলায় রুল Absolute" করে রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ আমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত পালন বৈধ। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মতিক্রমে গত ২৮ মে প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে অফিস তালাবদ্ধ করে স্থান ত্যাগ করলে মহামান্য হাইকোর্টের স্টে অর্ডার অমান্য করে, কমিটির বিনা অনুমতি ও রেজুলেশন ছাড়াই মোহাম্মদ আলী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে চেয়ারে বসেন এবং কাগজপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথি তছরুফ করেন। এব্যাপারে ইউএনও মহোদয়ের অফিসে বসা হলে মোহাম্মাদ আলী উপস্থিত হননি। কমিটির সদস্যবৃন্দ মোবাইল করলে তিনি ধরেননি। ইউএনও মহোদয় আমার কাগজপত্র দেখে বৈধতা উপলব্ধি করে আমাকে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। আমি মহামান্য হাই কোর্টের রায়, কমিটির রেজুলেশন ও মন্ত্রণালয়ের চিঠি মোতাবেক বৈধতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। এসময় তিনি মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগের একটি লিখিত মতামতও দেখান।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবীদার মোহাম্মদ আলী বলেন, তৎকালীন সভাপতি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ এস এম মোখলেছুর রহমান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জ্যেষ্ঠতার লংঘন ঘটিয়ে ১৩ নং স্রিয়ালের জুনিয়র প্রভাষক বাবলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। পরিপত্রের আলোকে আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করতে' ইচ্ছুক মর্মে লিখিত ভাবে গভর্নিং বডির সভাপতিকে অবহিত করতে গেলে তিনি আবেদন গ্রহন করেননি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনের প্রেক্ষিতে মাউশি, খুলনা অঞ্চল থেকে বাবলুর রহমানকে ৫/০৯/২০২৪ তারিখের মধ্যে বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত আধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করার বিষয়ে পত্র প্রদান করা হয়। বাবলুর রহমান মহামান্য হাই কোর্টে রীট পিটিশন করেন (নং ১০৯৬২/২০২৪)। মহামান্য হইকোট মাউশির চিঠির উপর ছয় মাসের Stay Order প্রদান করেন। আমি আপিল বিভাগে যাই, মহামান্য হাই কোর্টকে মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার জন্য direction প্রদান করা হয়।এসময় দাতা সদস্য রফিকুল ইসলাম সানা, প্রতিষ্ঠাতার পুত্র শরিফুল ইসলাম উজ্জল, শিক্ষক প্রতিনিধি রওশনারা লিপি, শিক্ষক বলাই কৃষ্ণ মন্ডল, সিনিয়র শিক্ষক রবিউল ইসলাম, কলেজ শাখার ছাত্ররা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ও আলোচনা রাখেন। কাগজপত্র, উভয় পক্ষের বক্তব্য ও সাধারণ শিক্ষক, কমিটির সদস্য, জমিদাতা, অভিভাবক ও ছাত্রদের মতামত শোনার পর মশিউল হুদা তুহিন ও নূরুল আফছার মুরতাজা বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্যে নূরুল আফসার মুরতাজা জানান, মহামান্য হাই কোর্টের মতামত, বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র আমরা দেখলাম, এগুলো আইনজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে আমরা দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত জানাব। আমাদেরকে মহামান্য হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সম্মান দেখাতে হবে। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হতে। এই সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক বাবলুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে তিনি জানান। এসময় উপস্থিত সকলে হাততালির মাধ্যমে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমানের পক্ষে "এক দফা এক দাবী, বাবলু স্যার বাবলু স্যার" শ্লোগান সহকারে ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করে।