শাহ আলম কৌশিক/ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিকরাও তার হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।পৌরসভার নয়শিমুল গ্রামের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, তাঁর মায়ের নামে থাকা বিদ্যুৎ মিটার পরিবর্তনের জন্য অফিসে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে অফিসের কর্মচারীরা পুরাতন মিটার খুলে নিয়ে গিয়ে জানান, প্রিপেইড মিটার লাগাতে হলে আবাসিক প্রকৌশলীকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে কামরুজ্জামানের নামে মামলা করা হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মিটার আমার মায়ের নামে হলেও মামলা করেছে আমার নামে। আমাকে ফাঁসানোর জন্যই এই মামলা করা হয়েছে।স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক জানান, অনিয়ম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে আবাসিক প্রকৌশলী তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং হুমকি দেন। একাধিক সাংবাদিকের অভিযোগ, ঘুষের বিষয়টি প্রকাশ না করতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ভুক্তভোগী গ্রাহক কামরুজ্জামান এমনকি ঘুষ দাবির ভিডিও প্রমাণও রেকর্ড করেছেন।বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া কয়েকজন গ্রাহক জানান, নিয়মিত চার্জের পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে আবেদন ফেলে রাখা হয় বা নানা অজুহাত দেখানো হয়। তারা অভিযোগ করেন, অফিসের ভেতরে একটি সমিতি রয়েছে, যেখানে প্রতি সংযোগ থেকে আদায়কৃত বাড়তি টাকা জমা হয় এবং পরে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়।সচেতন মহলের অভিযোগ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে উদ্যোগ না নিয়ে প্রকৌশলী উল্টো মাসোহারা গ্রহণ করেন। ফলে এলাকায় চুরি বিদ্যুতের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, বৈধ সংযোগ নিয়েও বারবার হয়রানির শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত বিল, বিলম্বিত মেরামত ও ঘনঘন হয়রানির কারণে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে।চরহোসেনপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার জানান, তার মিটার খুলে নিয়ে এসে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা দেখানো হয়। পরে ২ হাজার টাকা নিলেই আবার মিটার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।এ বিষয়ে আবাসিক প্রকৌশলী আমির হামজাকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ফোন পেয়েছিলাম, তবে সময় পাইনি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। ভিডিওতে বলা হলেই কি সত্যি হয়ে যাবে?স্থানীয়রা বলেন, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কারণে পুরো উপজেলার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, আবাসিক প্রকৌশলী আমির হামজাকে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।সচেতন মহল মনে করে, বিদ্যুৎ অফিস গ্রাহকদের জন্য একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এটি এখন হয়রানি ও অনিয়মের আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। তারা জোর দাবি জানান, দুর্নীতি বন্ধ করে বিদ্যুৎ অফিসকে প্রকৃত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।