চয়ন চৌধুরী/নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে গত মাসখানেক আগে বাড়ির পাশে নিজ জায়গায় একটি চিচিঙ্গা গাছের চারা রোপন করেন ছায়ারানি চন্দ্র কর (৩০) নামে এক নারী। দ্রুতই বেড়ে উঠছিল তার ওই চারা গাছটি। কিন্তু সম্প্রতি ওই চিচিঙ্গা গাছটিকে ছায়ারানি করের বড় জা পদ্মাবতী চন্দ্র কর (২৬) তার স্বামীর অংশের জায়গায় গাছটি চলে এসেছে দাবি করে তিনি প্রকাশ্যেই সেই গাছটি কেটে ফেলেন। পরে এ নিয়ে ছায়ারানি চন্দ্র করের সাথে তারই বড় জা পদ্মাবতী চন্দ্র করের কথা-কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন বিকেলে উল্টো তিনি তাকে মারধোর করেছে এমন একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় এসে তার ছোট জা ছায়ারানি চন্দ্র কর, তার দুই চাচা শ্বশুরসহ পরিবারের ছয় জনকে আসামি করে মোহনগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি ওই অভিযোগের বিষয়টি স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিকদের দিয়ে ভোরের ডাকসহ বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়।গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে এ ঘটনাটি ঘটে মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের ভাটাপাড়া গ্রামে।গতকাল শনিবার দুপুরে সরজমিনে ভাটাপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের রঞ্জন চন্দ্র করের স্ত্রী ছায়ারানি কর ও তারই বড়ভাই সৌদি প্রবাসী সুকেশ চন্দ্র করের স্ত্রী পদ্মাবতী চন্দ্র করের সাথে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। তবে পদ্মাবতী চন্দ্র করের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মাবতীর স্বামী সুকেশ চন্দ্র কর গত প্রায় ৪ বছর যাবত সৌদি আরবে রয়েছেন। এ সুযোগে গত প্রায় ৩ বছর যাবত পার্শ্ববর্তী জৈনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুকেশের খালাতো ভাই কৃপেশ চন্দ্র করের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সৌদি প্রবাসী সুকেশের স্ত্রী পদ্মাবতীর। আর তার এ বিষয়টি স্বামীর বাড়ির লোকজন মেনে নিতে না পাড়াতেই যত বিপত্তি। আর তখন থেকেই স্বামীর বাড়ির কারো সাথেই পদ্মাবতীর বনিবনা হয়নি। এর জেরেই নিজে চিচিঙ্গা গাছ কেটে তিনি নিজেই আবার স্বামীর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে তাকে মারধর করেছে বলে থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে স্বাক্ষী করা হয়েছে ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকা পরকীয়া প্রেমিক কৃপেশ চন্দ্র করকে।পদ্মাবতী চন্দ্র করের আপন চাচা শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অনিল চন্দ্র কর বলেন, আমাদের সাত ভাইয়ের মধ্যে আমি হলাম ৬ নাম্বার। আমাদের বড় ভাই ভাতিজারাসহ সবাই আমাকে মান্য করে। এমনকি আমাদের এই বড় পরিবারের যেকোনো কাজে কর্মে সবাই আমার প্রতি নির্ভরশীল থাকেন। কিন্তু ভাতিজা সুকেশ প্রবাসে থাকায় তার স্ত্রী পদ্মাবতী কৃপেশের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। তার এসব অসামাজিক কার্যকলাপে বাধা দেওয়ায় সে বাড়ির কাউকেই সহ্য করতে পারেনা। তাই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সে আমাদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এমনকি কতিপয় সাংবাদিকদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদও প্রকাশ করেছে। তবে আমি আমাদের পরিবাবের লোকজনকে জড়িয়ে কতিপয় সাংবাদিকরা যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছে আমি এসব আজগুবি সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সৌদি প্রবাসী সুকেশের স্ত্রী পদ্মাবতী কর চিচিঙ্গা গাছটি তিনি নিজেই কেটেছেন বলে স্বীকার করে বলেন, গাছটি আমার জায়গায় আইছে বইলাই আমি কাটছি। আর তারা আমারে মারছে বইলাতো থানায় অভিযোগ দিছি। পরকীয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি তা সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, ৬ লাখ টেহা (টাকা) খরচ কইরা আমার স্বামীরে বিদেশে পাঠাইছি কি পরকীয়া করার জন্য ? ওরা আমার সংসার ভাঙার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতাছে।এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো আমিনুল ইসলাম পিপিএম বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে একই পরিবারের লোকজনের মধ্যে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।