পরেশ দেবনাথ(নিজস্ব প্রতিনিধি)যশোরের কেশবপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শহিদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে (যুদ্ধ ভাসান পাদদেশে) ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।রোববার (১৪ ডিসেম্বর-২৫) সকালে অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন-এর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার হারুনর রশীদ-এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ শরীফ নেওয়াজ, কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সুকদেব রায়, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান। এছাড়াও স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে হানাদার বাহিনীর হাতে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টর্চার সেলে নির্যাতনে আক্রান্ত হওয়া আব্দুল মজিদ (বড়ভাই)।বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তানী বাহিনী ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যখন বুঝতে পারে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, পরাজয় অনিবার্য। তখন তারা এ দেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগতদিক দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতিকে মেধাশূন্য করতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের আধারে পাকিস্তানি বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আল শামসরা, অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে চোখ বেঁধে নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যা করে। শহিদ বুদ্ধিজীবীরা একটি স্বাধীন ও উন্নত বাংলাদেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল। তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের মাধ্যমে আজকের তরুণ প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে হবে। তাহলে আগামীর প্রজন্মরা উদ্বুদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত হয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শকে অনুসরণ করে দুর্নীতিমুক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলে মুক্তিযুদ্ধে সকল বুদ্ধিজীবী শহিদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জুুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা নতুন ভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন এদেশের স্বাধীনতা রক্ষা ও বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।আলোচনা সভা শেষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে হানাদার বাহিনীর হাতে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টর্চার সেলে নির্যাতন হওয়া মজিদপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল মজিদ (বড় ভাই), ঘাঘা গ্রামের মোসলেম উদ্দীন সরদার, কন্দর্পপুর গ্রামের আবু তালেব, বারুইহাটি গ্রামের কৃষ্ণপদ দাস, একই গ্রামের শিবুপদ দাস ও গৌর চন্দ্র বিশ্বাসের হাতে শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন-সহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা।এসময় উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সুদীপ বিশ্বাস, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেখ ফিরোজ আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম, কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবু তালেব, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আনজু মনোয়ারা, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার মনির হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি হাজী রুহুল কুদ্দুস, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান, আব্দুস সালাম, তপন কুমার, রবিউল ইসলাম সহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।