শরিফা বেগম শিউলী/রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের একটি হিন্দু পাড়ায় হামলা, লুটপাট ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে তাদের রংপুর সদর কোর্টে হাজির করা হলে আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।গত সোমবার (২৮ জুলাই) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে অজ্ঞাতনামা লোকজন ওই গ্রামে ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ১,২০০ জনের বিরুদ্ধে একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু করে পুলিশ।পরে যৌথ অভিযানে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। রংপুর সদর কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আরও গ্রেফতার করা হবে।স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুনরায় সহিংসতা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে মেরামত হচ্ছে হামলায় ভাংচুর হওয়া ঘর-বাড়ি।জেলা প্রশাসনের সহায়তায় হিন্দুপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোর মেরামত কাজ ইতোমধ্যেই শেষ পর্যায়ে।।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানি ছিল। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। কেউ দেশ ছাড়েনি, এলাকাও ছাড়েনি। এ ধরণের গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ করছি।এরই জেরে স্থানীয় একটি হিন্দুপাড়ায় হামলার ঘটনাও ঘটে। তবে ঘটনার পরপরই উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাতিম নামের ওই কিশোরের পোস্টকে কেন্দ্র করে একটি চক্র হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায়। তবে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।ঘটনার পর ভারতের কিছু অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, এই ঘটনার জেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। রংপুর জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এই খবরকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন।একজন স্থানীয় শিক্ষক ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাসিন্দা বলেন, “আমরা কোথাও যাইনি। প্রশাসন আমাদের পাশে আছে, মানুষজন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। ভারতের মিডিয়ায় যা ছড়ানো হয়েছে, তা গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।রংপুর জেলা প্রশাসক বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যকে ম্লান করা যাবে না। আমরা প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।