আব্দুর রশিদ/বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রতিবাদে ও আশাশুনি উপজেলাকে সাতক্ষীরা-০৩ আসন হিসেবে পূর্বাবস্থায় ফেরানোর দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার দুপুরে আশাশুনি প্রেসক্লাবে উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।লিখিত বক্তব্য পাঠ ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আবু মুছা তারিকুজ্জামান তুষার।তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে ২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত ২টি আসন ছিল। ভৌগলিকভাবে দুর্গম, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দুর্যোগপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা বিবেচনায় নির্ধারিত ১টি সংসদীয় এলাকা হলো আশাশুনি উপজেলা (সাতক্ষীরা ০৩) ও অপরটি শ্যামনগর উপজেলা (সাতক্ষীরা ৫)।
এরপর বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে জামায়াত ও বিএনপির ভোটার বেইজ এলাকা বাছাই করে শুধু ভোটার সংখ্যার বিবেচনায় বেশ কিছু সংসদীয় এলাকায় আসন কমিয়ে তাদের সুবিধামত ঢাকা সহ আরো কিছু জায়গায় আসন বৃদ্ধি করা হয়। তারই অংশ হিসাবে সাতক্ষীরা জেলার ৫ টি আসন থেকে একটি কমিয়ে ৪ টি আসন করা হয়।
কিন্তু এবার নতুন করে আশাশুনি ও শ্যামনগরকে ১টি মাত্র সংসদীয় এলাকা সাতক্ষীরা-৪ আসন করায় বিষয়টি সমাধান না হয়ে আরো জটিল হয়েছে।গত ৩০ জুলাই ২০২৫ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত সাতক্ষীরা- ০৪ আসনের অসুবিধার প্রধান কারণ হলো এই আসনের ভৌগোলিক বিস্তৃতি।যেমন, উত্তর-দক্ষিণে আশাশুনির কুল্যা ইউনিয়নের মহিষাডাঙ্গা থেকে শ্যামনগরের হরিনগর পর্যন্ত দুরত্ব ১৫০ কি.মি. ও পশ্চিমে আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়নের সুবর্ণাবাদ থেকে শ্যামনগরের যাতায়াতের কৈখালীর দুরত্ব ১২৭ কি.মি.।ভৌগোলিক বিবেচনায় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা দুটি অসংখ্য নদী-নালা দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এই দুই উপজেলার মধ্যে কোনো সড়ক ও সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।একদিকে আশাশুনির গ্রামগুলো কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, মরিচ্চাপ, বেতনা ও গলঘেষিয়া নদীর ৪টি দ্বীপে অবস্থিত। অপরদিকে, শ্যামনগর উপজেলা খোলপেটুয়া, মাদার, কপোতাক্ষ, কালিন্দী, কাকশিয়ালী, চুনা, আদি যমুনা ও মালঞ্চ নদী দ্বারা বেষ্টিত।উপজেলা দুটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকা হওয়ায় প্রতি বছর এই অঞ্চলের ২০টির অধিক পয়েন্টে নদী ভেঙে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়। বিগত বছরগুলোতে আইলা, আমফান, রেমাল, বুলবুল, ফনি নামের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি এই দুটি উপজেলাবাসী এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।আশাশুনি উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৩৪ কিলোমিটার কাঁচা বেড়িবাঁধ দ্বারা পরিবেষ্টিত। যে কারণে দুর্যোগের সময় নাগরিক সেবা প্রদানে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হিমসিম খেতে হয়।তাই শুধু ভোটার সংখ্যা দিয়ে নয় ভৌগলিক অবস্থান, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত উপকূলীয় এলাকার আপামর জন সাধারণের জীবন-মরণ প্রশ্ন হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে আশাশুনি উপজেলাকে পৃথক সংসদীয় আসন হিসেবে ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশাশুনি উপজেলাকে পৃথক সংসদীয় আসন হিসেবে ফিরিয়ে আনার দাবীতে উপজেলা জামায়াত ও বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে জানামতে ২১টি আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৫ আগষ্ট তার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে না নিলে আমরা আশাশুনি উপজেলা বাসীর পক্ষ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো এবং আমাদের এরকম কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাও. আনোয়ারুল হক, সহ সেক্রেটারী মাও. আব্দুল বারী, ডা. রোকনুজ্জামান, উপজেলা অফিস সেক্রেটারী মাও. রুহুল কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য এবিএম আলমগীর পিন্টু, বায়তুল মাল সেক্রেটারী মাও. শহিদুল ইসলাম, সদর ইউনিয়ন আমির হাফেজ আব্দুল্লাহ, সেক্রেটারী মাও. আব্দুল হাই, শেখ আরিফুল্লাহ প্রমুখ।