শাহ আলম কৌশিক(ঈশ্বরগঞ্জ ময়মনসিংহ)বাংলাদেশের মননশীল গদ্যশিল্পী, সমালোচক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক আবু ফাতেমা মুহাম্মদ ইসহাকের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়েছে।মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা পাঞ্জেরী সাংস্কৃতিক সংসদ-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পরিবার, শুভানুধ্যায়ী, কবি-সাহিত্যিক, নাট্যজন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।এর আগে বিকালে মরহুমের বড় ছেলে মো. ফজলুল হক, তিন ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে কবর জিয়ারত করেন। সেখানে ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। আত্মার মাগফিরাত কামনায় আয়োজন করা হয় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেয়।ময়মনসিংহ ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ও উপজেলা পাঞ্জেরী সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতির বক্তব্যে মো. আজিজুল হাই সোহাগ বলেন,আবু ফাতেমা মুহাম্মদ ইসহাক ছিলেন আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি কলমকে ব্যবহার করেছেন সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে। তাঁর লেখনীতে ধর্ম, সাহিত্য, সমাজ ও মানবতার যে মেলবন্ধন দেখা যায়, তা আজকের প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমরা গর্বিত, ঈশ্বরগঞ্জের মাটিতে এমন এক মহৎ মানুষ জন্মেছিলেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালাহউদ্দিন বিশ্বাস বলেন,শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে একটি প্রজন্মকে আলোকিত করা যায়। আবু ফাতেমা মুহাম্মদ ইসহাক তাঁর সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী লেখার মাধ্যমে সমাজে যে আলো ছড়িয়েছেন, তা কখনো ম্লান হবে না। নতুন প্রজন্মের উচিত তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।প্রধান আলোচক কবি নাজমা মমতাজ বলেন,তিনি শুধু একজন লেখকই ছিলেন না, ছিলেন সমাজ চিন্তক। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা ইসলাম নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধগুলো আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন সত্যিকারের প্রজ্ঞার সাধক।অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো.নূরে আলম জিকু,কবি ফয়সল আহমেদ (সঞ্চালক), সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রউফ আজাদ নোমানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রফিক, ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ ফারুক, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মো. জাহিদ হাসান, অধ্যাপক শাহজাহান কবির, নাজিম উদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক ও সংসদ ফোরামের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আল মামুন।১৩৬১ বঙ্গাব্দে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় তার লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ইত্তেফাক, সংগ্রাম, দেশ, পয়গাম, জাহান, আজকের বাংলাদেশ, ভূমণ্ডলসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন।তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মিলাদ ও কিয়াম সমস্যা (১৩৭৫), মুসলিম রেনেসাঁয় নজরুলের অবদান (১৯৭০), সাহিত্য বিচিত্রা (১৯৭১), বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভূমিকা (১৯৭০), আল-কোরআন: বিশ্বমানবের জন্য (১৯৭১), হৃদয় আমার কথা কয় (১৯৭৯), উজ্জীবিত আত্মা (১৯৮৬), বিতর্ক বিচিত্রা (১৯৮৮), কবি লায়লা রাগিব (১৯৯০), এবং ময়মনসিংহ জিলায় ইসলাম প্রচার ও মুসলমানের সংখ্যাবৃদ্ধি (১৯৯৫, মৃত্যুর পর প্রকাশিত)।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তার রচিত বলাকার কবি রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রকাব্যে মৃত্যুমাধুর্য প্রবন্ধ বিশেষভাবে আলোচিত হয়। আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথ, হিন্দুধর্ম ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ (১৯৭৯) তাকে বিশেষভাবে আলোচনায় নিয়ে আসে।আবু ফাতেমা মুহাম্মদ ইসহাক ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক কলমসৈনিক। ধর্মীয় মূল্যবোধে দৃঢ় থেকেও তিনি কখনো ধর্মান্ধতায় ভেসে যাননি। মানবতার সেবায় নিবেদিত তাঁর সাহিত্যকর্মে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট।১৯৯২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই প্রজ্ঞাদীপ্ত লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে সাহিত্যপ্রেমী মহল।