
শেখ মাহতাব হোসেন/খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় নারীরা এখন মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত তৈরি করছেন। স্বামী নির্ভরতা থেকে বের হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় সংকল্পে তারা মাছ ও চিংড়ি চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাদের সাফল্য দেখে আশেপাশের গ্রামগুলোতেও নারীদের মধ্যে বাড়ছে মাছ চাষের আগ্রহ।গুটুদিয়ার চাষী মিতালী মন্ডল চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময়ে চিংড়ি চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। খুলনা-ঢাকাতে মাছ চাষের উপর সভা-সেমিনারেও অংশ নিয়েছেন। মাছ চাষের উপর সহায়তা নিয়ে স্বামীকে সহায়তা করার পাশাপাশি নিজেও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।মাগুরাঘোনা গ্রামের খাদিজা বেগম, শাহিদা বেগম, মনেরা বেগম, ফারজানা খাতুন ও তানিয়া খাতুনসহ মোট ১৫ জন মহিলা ও ১০ জন পুরুষ মিলে মৎস্য অফিসের উৎসাহে একটি ঘের লীজ নিয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নেতৃত্ব বিকাশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তারা আশা করছে, তারা ভাল কিছু করে পরিবারকে স্বাবলম্বী করবেন।আরাজি সাজিয়াড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির ফর্সা বিশ্বাস ঋণ নিয়েছেন ৫০,০০০ এবং মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ০২ দিনের। একই গ্রামের মল্লিকা বিশ্বাস, নীলিমা বিশ্বাস, দিপ্তী দাস, তাপসী দাস ও লাভলী বিশ্বাস ৫০ হাজার থেকে ১.০ লাখ টাকা ঋণ ও ০২ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ-চিংড়ি চাষ করছেন।শোভনার খাদিজা বেগম, মুসলিমা বেগম, রেখা বেগম ও হাফিজা বেগমসহ মোট ১৩ জন মহিলা ও ১২ জন পুরুষ মিলে শোভনা পশ্চিমপাড়ায় একটি ঘের লিজ নিয়ে সরকারি সহায়তায় এই প্রথম তারা দলবদ্ধভাবে মাছ চাষ করছে। অফিস থেকে হাতে-কলমে মাছ-চিংড়ি চাষের উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এছাড়া মৎস্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় চুন, সার, খৈল, মাছের পোনা, চিংড়ির পিএল এবং খাবারও পেয়েছে।গোনালী আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির রুমা বেগম, হাসিনা বেগম, সাবিনা বেগম ও রুপা দত্ত ঋণ নিয়েছেন ৮০ হাজার থেকে ১.০ লাখ টাকা এবং চিংড়ি চাষের উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ০২ দিনের। তারা এখন নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছেন।হাসানপুরের পারভীন, রেশমা, রুপা, নাজমা, মারুফা, নাসিমা, মুসলিমা, ঝর্ণা, সুরাইয়া, বিলকিস, নাসরিন ও কয়েকজন পুরুষ সদস্য উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে হাতে-কলমে মাছ-চিংড়ি চাষের উপর প্রশিক্ষণ ও কারিগরী সহায়তা নিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।রুদাঘরার মুক্তা বিশ্বাস থেকে জানা যায় যে, তিনি ২৫ জন সদস্যের মৎস্যচাষি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং মৎস্য অফিসের সহায়তায় বিদেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তার এই সমিতির মাধ্যমে এলাকার মহিলারা নতুন স্বপ্ন নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।এছাড়া, ওড়াবুনিয়ার সুজলা মিস্ত্রী, শিবরগরের লাবনী রায়, আইতলার লাবনী রায়ও তাদের নিজ নিজ এলাকায় ২৫ জন সদস্যের মৎস্যচাষী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, “ডুমুরিয়ার নারীরা মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গুটুদিয়ার মিতালী মন্ডল, ভান্ডারপাড়ার কনিকা বিশ্বাস, রুদাঘরার মুক্তা বিশ্বাস ও গোনালীর কাকলি বিশ্বাসসহ অনেক নারী মাছ চাষে ভাল করছেন। শোভনা, মাগুরাঘোনা ও হাসানপুরের চিংড়ি চাষ প্রকল্পে উপকরণ সহায়তা ও কারিগরী প্রশিক্ষণ দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। গোনালী ও আরাজি সাজিয়াড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতিও মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা মাছ চাষের ফল পাচ্ছেন। আশা করছি তারা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবেন। মৎস্য বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগীতায় সদা প্রস্তুত।ডুমুরিয়ার নারী মৎস্যচাষিদের এই অগ্রযাত্রা শুধু গ্রামীণ অর্থনীতিতে নয়, পুরো অঞ্চলে নতুন উন্নয়নধারার সূচনা করছে।