
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্(হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি) নেত্রকোনা।নেত্রকোনা ,কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ মূলতঃ কৃষি নির্ভর। এতদঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার অন্যতম পাথেয় বোরো মৌসুমের এই ফসল। তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে একমাত্র এই বোরো ফসলের জন্যে।কৃষকের স্বপ্নের এ সোনালি ফসলকে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষার্থে প্রতিবছর সরকারিভাবে হাওর রক্ষায় দেওয়া হয় অস্থায়ী বেড়িবাঁধ। সেসব বাঁধ নির্মাণের কাজ সরকারি নির্দেশনানুযায়ী,৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পি.আই.সি গঠন, ১৫ ডিসেম্বর মধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কোনো কাজ শুরু না হওয়ায় আতঙ্ক ও হতাশায় ভেগছেন হাওরাঞ্চলের কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠী।কিন্তু গত বুধবার পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো কমিটিই (পিআইসি) গঠন করা হয়নি। ফলে আগাম বন্যায় ফসল ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় ভোগছেন নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী।পিআইসি গঠন সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৪টি হাওর রয়েছে। এসব হাওরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে বোরো ফসলের চাষ হয়। বোরো ফসল রক্ষায় গত বছর জেলার ৭ উপজেলায় ১৪৯ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ জন্য ১৯১টি পি.আই.সি গঠন করা হয়েছিল। এতে বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে এবার কত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে সেই জরিপই এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে চুড়ান্ত হয়নি কতগুলো পি।আই.সি গঠন করা হবে এবং এর বরাদ্দের পরিমাণও জানাতে পারেনি নেত্রকোনা পাউবো। উপজেলার গ্রামের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ঋণ করে বোরোর আবাদ করছেন। বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু হয়নি। এ কারণে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হলে নিজেদের সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটিমাত্র বোরো ফসলের উপরে আমাদের সারা বছরের খাওয়াদাওয়া, হাটবাজার ও পোলাপানের লেখাপড়ার খরচসহ যাবতীয় খরচ নির্ভর করে। এবার সময়মতো বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। এরফলে যথাসময়ে শেষ করতে পারবে না। আগাম বন্যা হলে আমাদের ফসল বাঁচানো যাবে না।প্রকল্পের সদস্যসচিব ও নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, “ জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, আগামী সপ্তাহে পি.আই.সি গঠন করার পাশাপাশি কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। জরিপের রিপোর্ট এখনও হাতে না পাওয়ায় এবার কতগুলো পি.আই.সি গঠন করা হবে আর বরাদ্দ কত হবে জানানো যাচ্ছে না।কাজ শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়েই শেষ করতে পারবো। এ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী।এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, “চলতি সপ্তাহে পি.আই.সি কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করা হবে।