পরেশ দেবনাথ/সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগণই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ”—এই মূল্যবান বার্তা নিয়ে যশোরে অনুষ্ঠিত হলো ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ জেলা পর্যায়ের নাগরিক সংলাপ।সোমবার (২১ জুলাই-২৫) জয়তী সোসাইটি মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংলাপে রাজনৈতিক সংস্কার, জাতীয় সনদ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংখ্যালঘু ও দলিত অধিকারসহ নানা বিষয়ে বক্তারা সুস্পষ্ট মতামত তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, যশোর জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সালেহা বেগম। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সংলাপের সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সুশাসন তখনই প্রতিষ্ঠা সম্ভব, যখন জনগণ সচেতনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ ও দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার সংলাপটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, “এই সংলাপ কেবল আলোচনা নয়, বরং একটি নীতিগত অবস্থান তৈরির প্রক্রিয়া, যার ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে পরিবর্তনের দাবি তোলা হবে।আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ খোরশেদ আলম জাতীয় সনদ প্রক্রিয়া ও সুপারিশগুলো নিয়ে একটি তথ্যবহুল উপস্থাপনা করেন। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন, সুজন কুষ্টিয়ার সভাপতি আবুহেনা মোঃ গোলাম রসুল বাবলু, ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সধারন সম্পাদক শরীফ মাহমুদুল হাসান, সরাফত হোসেন সাধারণ সম্পাদক মাগুরা জেলা, অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান সভাপতি চুয়াডাঙ্গা, সৈয়দ জাকির হোসেন সাধারন সম্পাদক মেহেরপুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোজাম্মেল হক, মোঃ আসাদুজ্জামান, অখিল কুমার চক্রবর্তী, মোঃ ইকরামুল কবির , মোঃ বাবুল আক্তার সাংবাদিক, কালের কন্ঠ, মোঃ মিলনুর রশিদ এডভোকেট এপিপি, কুষ্টিয়া জজকোট, মোঃ আব্বাস উদ্দীন সভাপতি সুজন মনিরামপুর, মোঃ শফিকুল ইসলাম, উবাইদুল্লাহ হক, জান্নাতুল ফেরদৌস এডভোকেট যশোর জজকোর্ট, সাংবাদিক মুজাহিদ আল মুন্না, দলিত নেতা হিরন লাল সরকার, কেশবপুরের প্রতিনিধি উজ্জ্বল কুমার দাশ, তরুণ প্রতিনিধি মাহমুদ হোসেন, তৃতীয় লিঙ্গ প্রতিনিধি, দিপক রায়, এডভোকেট এম আব্দুল আহাদ, প্রভাষক হাসিনা আক্তার কাকলি, হুমাউন কবির আগা, ড. পারভিন আক্তার লাভলি প্রমুখ।নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য বক্তারা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন-নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নয়, সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর মাধ্যমে নারীর সত্যিকারের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। দলিত ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা তাদের বৈষম্য ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান যে, সংবিধানে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন ছাড়া তারা জায়গা পাচ্ছে না। জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ, শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। সংসদ সদস্যদের জন্য কমপক্ষে ডিগ্রি পাস শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা উচিত। যারা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেবেন, তাদের ন্যূনতম জ্ঞান, বিবেচনা ও নেতৃত্বগুণ থাকা প্রয়োজন। একই ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব একসাথে পালন করতে পারবেন না—এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা জরুরি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রশাসনের প্রতিনিধির বদলে নিরপেক্ষ ব্যক্তি হওয়া উচিত। তরুণদের রাজনৈতিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা না হলে নেতৃত্ব গোষ্ঠীবদ্ধ হবে। তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের পরিচয় শুধু ভোটার আইডিতে নয়, জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায়ও থাকা প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। বিচার বিভাগ সংস্কারে জেলা পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ চালু, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। স্থানীয় সরকারকে উন্নয়ন ও সেবায় আরও কার্যকর করতে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাকে আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা প্রদান করা উচিত। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না হলে পিআর পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাবে না।
সংলাপ শেষে দিলীপ কুমার সরকার বলেন ১৫টি সংলাপের মাধ্যমে “৬৪টি জেলাকে নাগরিক সংলাপের অন্ত:র্ভুক্ত করা হবে এবং সুপারিশসমূহ ২৬ জুলাই ঢাকায় জাতীয় কর্মসূচিতে উপস্থাপন করা হবে, যা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।”